Saturday, July 19, 2014

বিষ্ণু বিশ্বাস

‘শুধু মৃতদের গল্প কত আর কাঁধে ঝুলে যাবে/ এবার নিষ্কৃতি পেলে, শান্তি অন্বেষণে মহাকাশে/গিয়ে, দু’টুকরো লোহা ঠুকে আগুন জ্বালিয়ে দেব/ অসহ অসীম শব পুড়ে হোক ছাই পুড়ে ছাই।’– এ কবিতার লাইনগুলো যিনি লিখেছিলেন তিনি অনেক বছর ছিলেন নিরুদ্দেশ, লোকচক্ষুর আড়ালে। তিনি আশির দশকের কবি বিষ্ণু বিশ্বাস।
Bishnu Biswas
তিনি রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থা।
আশির দশকের এ কবি জন্মগ্রহণ করেন ঝিনাইদহ জেলার বিষয়খালিতে ১৯৬২ সালের ২৯ মে। ঝিনাইদহের নলডাঙা ভূষণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৭৯’ সালে এস এস সি এবং ৮১ সালে ঝিনাইদহ সরকারি কে সি কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে। সেখানে পড়ার সময় তিনি যুক্ত হন ছোটকাগজ ‘পেঁচা’ সম্পাদনার সঙ্গে। পরে ৮৫ সালে অনার্স পাশ করে চলে আসেন ঢাকায়।
এখানে এসেই ভিড়ে যান সমসাময়িক ঢাকার কবিদের সঙ্গে। এলোমেলো বোহেমিয়ান জীবনযাপন করতে গিয়ে যেন হোঁচট খান। অনেক সময় আর্থিক সংকটেও পড়েন। এরই মধ্যে শুরু হয় ভারতে বাবরি মসজিদ হামলা। এর প্রভাব পড়ে তখন বাংলাদেশেও। রাষ্ট্রের ওই পরিস্থিতিতে বিষ্ণু কি রকম আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গেলেন।
একটা সাদা গাড়ি অথবা ছুরি হাতে কেউ তাকে তাড়া করে ফিরছে— এ রকম ভীতিবিচলিত হয়ে বেরিয়ে পড়তেন মাঝে মাঝে। অসংলগ্নতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে তখন নিয়ে যাওয়া হয় মনোচিকিৎসকের কাছে। সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত। ডাক্তার সার্বক্ষণিক দেখাশোনার ওপর জোর দিলেন। কিন্তু সব নজরদারি ফাঁকি দিযে হঠাৎ তিনি উধাও হয়ে যান। এরপর মাঝে মাঝেই তিনি এভাবে উধাও হয়ে যেতেন আবার ফিরে আসতেন।
ইতোমধ্যে ১৯৯৩ সালে একদিন তিনি চলে যান পশ্চিমবঙ্গে, তারপর বহু বছর তার তেমন কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি।
২০১০ সালে হঠাৎ শোনা যায় তিনি বনগাঁয় আছেন। শারীরিকভাবে খুব অসুস্থ এবং কথা একদমই বলেন না। পশ্চিমবঙ্গের কবি তমাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বিষ্ণুর খোঁজ জানান। সম্প্রতি কবি বিভাস রায়চৌধুরী তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি মোবাইল ফোনে তার কয়েকটি ছবিও তুলেছেন। ছবি দেখে অবাক হতে হয়, তার আগের কান্তিমান চেহারার সাথে বতর্মানে ভাঙাচোরা বিধ্বস্ত চেহারার অনেক ফারাক। বিষ্ণু যখন নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন ১৯৯৩ সালে, তখন তার বয়স ছিল ৩১ বছর। বর্তমানে তার বয়স ৪৯। ছবিতে সেই বয়সের ছাপ পড়েছে। চুল দাড়ি পেকে গেছে, অযতেœ অবহেলায় ভাঙ্গা গালে রুগ্নতার ছাপ।
কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের এক চিঠির মাধ্যমে জানা গেল, কলকাতা থেকে কবি ও সঙ্গীতকার মিতুল দত্তসহ ঢাকা থেকে তাঁর বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীরা চেষ্টা করছেন তাঁর চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের। আমরা কামনা করছি খুবই শিগগিরই কবি বিষ্ণু বিশ্বাস ফিরে আসবেন স্বাভাবিক জীবনে।
এখন পর্যন্ত বিষ্ণু বিশ্বাসের প্রকাশিত কবিতার বই মাত্র একটি ‘ভোরের মন্দির’। আশির দশকে প্রকাশিত প্রসূন, গাণ্ডীব, পেঁচা এবং নব্বই দশকে প্রকাশিত নদী, দ্রষ্টব্য ইত্যাদি ছোটকাগজে তার কবিতা প্রকাশিত হত। বিষ্ণুর নিরুদ্দেশের পর তার বন্ধুদের আগ্রহে নিশাত জাহান রানার ভূমিকাসহ ২০০১ সালে প্রকাশ করা হয় ‘ভোরের মন্দির’।

0 comments:

Post a Comment