Monday, July 28, 2014

এত হাসি কোথায় পেলে – জসীম উদ্দিন

এত হাসি কোথায় পেলেএত কথার খলখলানিকে দিয়েছে মুখটি ভরেকোন বা গাঙের কলকলানি |কে দিয়েছে রঙিন ঠোঁটেকলমী ফুলের গুলগুলানি |কে দিয়েছে চলন বলনকোন সে লতার দোল দুলানী |কাদের ঘরে রঙিন পুতুলআদরে যে টইটুবানি |কে এনেছে বরণ ডালায়পাটের বনের বউটুবানী |কাদের পাড়ার ঝামুর ঝুমুরকাদের আদর গড়গড়ানিকাদের দেশের কোন সে চাঁদেরজোছনা ফিনিক ফুল ছড়ানি |তোমায় আদর করতে আমারমন যে হলো উড়উড়ানিউড়ে গেলাম সুরে পেলামছড়ার গড়ার গড়গড়ানি...

প্রতিদান – জসীমউদ্দীন

আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা, আমি বাধি তার ঘর,আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।যে মোরে করিল পথের বিবাগী;পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি;দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হয়েছে মোর;আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা, আমি বাধি তার ঘর ।আমার একুল ভাঙ্গিয়াছে যেবা আমি তার কুল বাধি,যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি;সে মোরে দিয়েছে বিষ ভরা বান,আমি দেই তারে বুক ভরা গান;কাটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম ভর,আপন করিতে কাদিঁয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর ।মোর বুকে যেবা কবর বেধেছে আমি তার বুক ভরি,রঙ্গীন ফুলের সোহাগ জড়ান ফুল মালঞ্চ ধরি।যে মুখে সে নিঠুরিয়া...

ফুটবল খেলোয়াড় – জসীম উদ্দিন

আমাদের মেসে ইমদাদ হক ফুটবল খেলোয়াড়,হাতে পায়ে মুখে শত আঘাতের ক্ষতে খ্যাতি লেখা তার।সন্ধ্যা বেলায় দেখিবে তাহারে পটি বাঁধি পায়ে হাতে,মালিশ মাখিছে প্রতি গিঠে গিঠে কাত হয়ে বিছানাতে।মেসের চাকর হয় লবেজান সেঁক দিতে ভাঙ্গা হাড়ে,সারা রাত শুধু ছটফট করে কেঁদে কেঁদে ডাক ছাড়ে।আমরা তো ভাবি ছমাসের তরে পঙ্গু সে হল হায়,ফুটবল-টিমে বল লয়ে কভু দেখিতে পাব না তায়।প্রভাত বেলায় খবর লইতে ছুটে যাই তার ঘরে,বিছানা তাহার শূন্য পড়িয়া ভাঙা খাটিয়ার পরে।টেবিলের পরে ছোট বড় যত মালিশের শিশিগুলি,উপহাস যেন করিতেছে মোরে ছিপি- পরা দাঁত তুলি।সন্ধ্যা বেলায় খেলার মাঠেতে চেয়ে দেখি বিস্ময়ে,মোদের...

Wednesday, July 23, 2014

তোমায় আমি – জীবনানন্দ দাশ

তোমায় আমি দেখেছিলাম বলেতুমি আমার পদ্মপাতা হলে;শিশির কণার মতন শূন্যে ঘুরেশুনেছিলাম পদ্মপত্র আছে অনেক দূরেখুঁজে খুঁজে পেলাম তাকে শেষে।নদী সাগর কোথায় চলে ব’য়েপদ্মপাতায় জলের বিন্দু হ’য়েজানি না কিছু-দেখি না কিছু আরএতদিনে মিল হয়েছে তোমার আমারপদ্মপাতার বুকের ভিতর এসে।তোমায় ভালোবেসেছি আমি, তাইশিশির হয়ে থাকতে যে ভয় পাই,তোমার কোলে জলের বিন্দু পেতেচাই যে তোমার মধ্যে মিশে যেতেশরীর যেমন মনের সঙ্গে মেশে।জানি আমি তুমি রবে-আমার হবে ক্ষয়পদ্মপাতা একটি শুধু জলের বিন্দু নয়।এই আছে, নেই-এই আছে নেই-জীবন চঞ্চল;তা তাকাতেই ফুরিয়ে যায় রে পদ্মপাতার জলবুঝেছি আমি তোমায় ভা...

প্রতিচ্ছবি – শঙ্খ ঘোষ

জংলা পথের মধ্যিখানে সেই আমাদের সত্যিকারের বিভেদ।তখন থেকে উলটোমুখে চলছি দুজন ঝড়ঝঞ্ঝায়বাঁয়ের পথে আমি, ডাইনে তুমি।চলতে চলতে যত্সামান্য মনেও পড়ছে মিলনদিনের ছবিরক্তমূলক বিচ্ছেদেরও দাগ।চলতে পারি তবু কেবল নিজের মতো, আরজ্ঞানগম্যি ছলকে ছলকে দূরের থেকে বাঁকতে পারি আরো অনেক দূরে।যেতে যেতে কখন দেখি পরস্পরের পাশ -কাটানো পথ গিয়েছে ঘুরেবৃত্ত হয়ে-আমিই কখন হেঁটে যাচ্ছি তোমার পথে এবং তুমি আমারঅতর্কিতে পালটে গেছে ডাইনে বাঁয়ে পথ হয়েছে অদলবদল বাঁকাতুমিই এখন আমি, আমিই তুমিরক্তরেখার এপার থেকে অবাক হয়ে আমার মুখে দেখছি তোমার স্পষ্ট প্রতিচ্ছব...

ছুটি – শঙ্খ ঘোষ

হয়তো এসেছিল | কিন্তু আমি দেখিনি |এখন কি সে অনেক দূরে চ’লে গেছে?যাব | যাব | যাব |সব তো ঠিক করাই আছে | এখন কেবল বিদায় নেওয়া,সবার দিকে চোখ,যাবার বেলায় প্রণাম, প্রণাম!কী নাম?আমার কোনো নাম তো নেই, নৌকো বাঁধা আছে দুটি,দুরে সবাই জাল ফেলেছে সমুদ্র...

শূন্যের ভিতরে ঢেউ – শঙ্খ ঘোষ

বলিনি কখনো?আমি তো ভেবেছি বলা হয়ে গেছে কবে।এভাবে নিথর এসে দাঁড়ানো তোমার সামনেসেই এক বলাকেননা নীরব এই শরীরের চেয়ে আরো বড়োকোনো ভাষা নেইকেননা শরীর তার দেহহীন উত্থানে জেগেযতদূর মুছে নিতে জানেদীর্ঘ চরাচরতার চেয়ে আর কোনো দীর্ঘতর যবনিকা নেই।কেননা পড়ন্ত ফুল, চিতার রুপালি ছাই, ধাবমান শেষ ট্রামসকলেই চেয়েছে আশ্রয়সেকথা বলিনি? তবে কী ভাবে তাকাল এতদিনজলের কিনারে নিচু জবা?শুন্যতাই জানো শুধু? শুন্যের ভিতরে এত ঢেউ আছেসেকথা জানো ন...

ভয় – শঙ্খ ঘোষ

ভয়? কেন ভয়? আমি খুবশান্ত হয়ে চলে যেতে পারি।তুমি বলো ভয়। দেখো চেয়েঅতিকায় আমার না-এরচৌকাঠে ছড়িয়ে আছে হাত-যে হাতে সমুদ্র, ঘন বন,জ্যোতির্বলয়ের ঘেরাটোপেশ্বাপদসুন্দর শ্যামলতারক্তপাত, জীবনযাপন।প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসরস্মৃতি শুধু, ইতিহাস আছে-তুমি আর আমি শান্ত তারপ্রবাহদুয়ার রাখি খুলে।তার মাঝখানে যদি পেশিএকবারও কেঁপে ওঠে, সে কিভয়? ভয় নয়। ভয় শুধুশূন্যতাও যদি মুছে যায়-শুধু এই প্রতিধ্বনিহীনঅস্তীতির ঘট ভেঙে গিয়েকোথাও না থাকে যদি নাতার পায়ে উঠে আসে ভয়শূন্যতাবিহীন শূন্যতা...

ফুলবাজার – শঙ্খ ঘোষ

পদ্ম, তোর মনে পড়ে খালযমুনার এপার ওপাররহস্যনীল গাছের বিষাদ কোথায় নিয়ে গিয়েছিল?স্পষ্ট নৌকো, ছৈ ছিল না, ভাঙা বৈঠা গ্রাম হারানোবন্য মুঠোয় ডাগর সাহস, ফলপুলন্ত নির্জনতাআড়ালবাঁকে কিশোরী চাল, ছিটকে সরে মুখের জ্যোতিআমরা ভেবেছিলাম এরই নাম বুঝি বা জন্মজীবন |কিন্তু এখন তোর মুখে কী মৃণালবিহীন কাগজ-আভাসেদিন যখন হেসেছিলি সত্যি মুখে ঢেউ ছিল না!আমিই আমার নিজের হাতে রঙিন ক’রে দিয়ে ছিলামছলছলানো মুখোশমালা, সে কথা তুই ভালই জানিস—তবু কি তোর ইচ্ছে করে আলগা খোলা শ্যামবাজারেসবার হাতে ঘুরতে-ঘরতে বিন্দু বিন্দু জীবনযাপ...

ঘুড়ি – জামিল আশরাফ

দেয়ালে টাঙ্গানো যে ঘুড়িটি,তা আর উড়বে না আকাশে।দেখতে দেখতে সাদা রঙ্গা সেঘুড়িটি হয়ে যাবে ফ্যাকাশে।আস্তে আস্তে জমবে ধূলো তাতে,এক সময় বার্ধক্যের মত চিড়ধরে তা হয়ে যাবে ধ্বংস-নিবিড়;এইযে দেখছেন এই ঘুড়িটি,তা আর উড়বে না আকাশে।কারণ, এ ঘুড়িটি যে উড়াতোসে-ই উড়ে গেছে আকাশ...

Monday, July 21, 2014

আমি কিরকম ভাবে বেঁচে আছি – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশএই কী মানুষজন্ম? নাকি শেষপরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা! প্রতি সন্ধ্যেবেলাআমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলাকরে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসেথাকি-তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে। আমি আক্রোশেহেসে উঠি না, আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি,মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে; খাঁটিঅন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে-(ও-গাঁয়ে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই!)আমি স্বপ্নের মধ্যে বাবুদের বাড়িরে ছেলেসেজে গেছি রঙ্গালয়ে, পরাগের মতো ফুঁ দিয়ে উড়িয়েছি দৃশ্যলোকঘামে ছিল না এমন গন্ধকযাতে...

প্রেমিকা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

কবিতা আমার ওষ্ঠ কামড়ে আদর করেঘুম থেকে তুলে ডেকে নিয়ে যায়ছাদের ঘরেকবিতা আমার জামার বোতাম ছিঁড়েছে অনেকহঠাৎ জুতোর পেরেক তোলে!কবিতাকে আমি ভুলে থাকি যদিঅমনি সে রেগে হঠাৎ আমায়ডবল ডেকার বাসের সামনে ঠেলে ফেলে দেয়আমার অসুখে শিয়রের কাছে জেগে বসে থাকেআমার অসুখ কেড়ে নেওয়া তার প্রিয় খুনসুটিআমি তাকে যদিআয়নার মতোভেঙ্গে দিতে যাইসে দেখায় তার নগ্ন শরীরসে শরীর ছুঁয়ে শান্তি হয় না, বুক জ্বলে যায়বুক জ্বলে যায়, বুক জ্বলে যা...

কবিতা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্নে দেখেছি যে তুমিতোমার বাস্তবতা হারিয়ে ফেলেছোএখনো কি সময় আছে তোমার জীবন্ত শরীর স্পর্শ করারএবং যে ওষ্ঠ থেকে আমার অতি প্রিয় স্বর জন্ম নেয়সেখানে চুম্বন দেবার?…আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি যে হয়তোআমার পক্ষে আর জাগাই সম্ভব হবে নাআমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমোই, আমার শরীর সবরকম জীবন ও ভালোবাসার জন্য উন্মুক্ত……আমি তোমার ভুরু ছুঁতে পারি, ওষ্ঠ ছুঁতে পারি এত কম……আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি, হেঁটেছি,কথা বলেছি।শুয়েছি তোমার ছায়ার সঙ্গে...

নীরার পাশে তিনটি ছায়া – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

নীরা এবং নীরার পাশে তিনটি ছায়াআমি ধনুকে তীর জুড়েছি, ছায়া তবুও এত বেহায়াপাশ ছাড়ে নাএবার ছিলা সমুদ্যত, হানবো তীর ঝড়ের মতো–নীরা দু’হাত তুলে বললো, ‘মা নিষাদ!ওরা আমার বিষম চেনা!’ঘূর্ণি ধুলোর সঙ্গে ওড়ে আমার বুক চাপা বিষাদ–লঘু প্রকোপে হাসলো নীরা, সঙ্গে ছায়া-অভিমানীরাফেরানো তীর দৃষ্টি ছুঁয়ে মিলিয়ে গেলনীরা জানে ন...

Kiss of my Love

Your beauty overwhelms meAs I wrap my arms around youI press your softness tightGreat passion fills my inner beingI'm captured in your embraceYour eyes control my very soulThe touch of your lips, heavenForever frozen in timeAll else fades into nothi...